ইহুদি আগ্রাসনে ইসলামের যে ক্ষতি

- আপডেট সময় : ০১:১৬:৫৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ জুন ২০২৫ ৩৩ বার পড়া হয়েছে
আজকের মুসলিম বিশ্ব শুধু শারীরিক নয়, বরং চিন্তা-চেতনা, সংস্কৃতি, রাজনীতি, অর্থনীতি,সবদিক থেকেই এক ভয়াবহ আগ্রাসনের শিকার। এ আগ্রাসন এসেছে প্রধানত দুই উৎস থেকে, ইহুদি ষড়যন্ত্র, পশ্চিমা সভ্যতার অন্ধ আধিপত্য এই দুই শক্তি ভিন্ন রূপে, কিন্তু একই লক্ষ্যে মুসলিমদের ইমান, ঐক্য ও আত্মপরিচয় ধ্বংস করা।
ইহুদি ও খ্রিস্টানদের চক্রান্ত
وَدُّوا لَوْ تَكْفُرُونَ كَمَا كَفَرُوا فَتَكُونُونَ سَوَاءً তারা চায়, তোমরাও যেন তাদের মতো কুফরি করো, যাতে তোমরা সমান হয়ে যাও। (সুরা নিসা:৮৯) وَلَن تَرْضَىٰ عَنكَ الْيَهُودُ وَلَا النَّصَارَىٰ حَتَّىٰ تَتَّبِعَ مِلَّتَهُمْইহুদি ও খ্রিস্টানরা কখনোই তোমার প্রতি সন্তুষ্ট হবে না, যতক্ষণ না তুমি তাদের ধর্ম অনুসরণ করো।(সুরা বাকারা:১২০) মুসলিমদের মনে এই চেতনাই জাগাতে হবে, তাদের উদ্দেশ্য আমাদের দ্বীন, সংস্কৃতি ও নেতৃত্ব ধ্বংস করা।
ইতিহাস ও বর্তমান বাস্তবতা
১. ইসলামের বিরুদ্ধে তাদের পুরানো বিদ্বেষ নবিদের হত্যা করেছে। হজরত ইসা আ.-কে হত্যার চেষ্টা করেছে। মদিনায় ইসলাম আসার পর থেকেই তারা ষড়যন্ত্র শুরু করে (ইহুদি গোত্র. বনু কুরায়জা, বনু নাজির, বনু কাইনুকা)
আধুনিক যুগে জায়নবাদী পরিকল্পনা The Protocols of the Elders of Zion নামক বইয়ে ইহুদিদের বিশ্ব-শাসনের গোপন পরিকল্পনা রয়েছে। ১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিনের ভূমি দখল করে ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইল প্রতিষ্ঠা।
আল-আকসা মসজিদ ও জেরুজালেম দখলের স্বপ্ন এখনো তারা বাস্তবায়ন করছে। মিডিয়া, সিনেমা, ব্যাংকিং, প্রেস, ইউএন,সব জায়গায় তাদের কর্তৃত্ব। বিশেষ করে ফিলিস্তিনে গণহত্যা শিশুহত্যা, নারীদের ধর্ষণ, হাসপাতাল ও মসজিদ ধ্বংস,সবই জায়নবাদী চক্রান্তের অংশ।
পশ্চিমা সংস্কৃতি ও সভ্যতার ছদ্ম আগ্রাসন
১.লিবারেলিজম, সেক্যুলারিজম, ফেমিনিজম, এলজিবিটিকুলচার ইসলামবিরোধী এই চিন্তাধারাগুলো পশ্চিমা বিশ্ব মুসলিম যুবসমাজের মধ্যে ঢুকিয়ে দিচ্ছে। ২.মিডিয়া, মিউজিক, সিনেমা ও ফ্যাশনের মাধ্যমে অশ্লীলতা, হারাম সম্পর্ক, নারীস্বাধীনতা,এসব মুসলিম সমাজে চেতনা পরিবর্তনের প্রধান হাতিয়ার।৩.শিক্ষা ও ভাষা উপনিবেশবাদ মুসলিম দেশগুলোতে পশ্চিমা শিক্ষা ও ভাষার প্রভাব বিস্তার করে ইসলামি চিন্তা চর্চা দুর্বল করে দিচ্ছে। ৪.অর্থনৈতিক দাসত্ব IMF, World Bank, FED, এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মুসলিম দেশগুলোকে ঋণের ফাঁদে ফেলে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখে দিচ্ছে।
মুসলিম বিশ্বের দুর্বলতা এবং চক্রান্তে সহজ শিকার হওয়ার কারণ
১.দ্বীনের দুর্বলতা কুরআন ও সুন্নাহর জ্ঞান থেকে দূরে সরে যাওয়া ২.মুসলিম নেতৃত্বের বিভক্তি উম্মাহ বিভক্ত, জাতীয়তাবাদে ডুবে আছে। ৩.দুনিয়ার মোহ পশ্চিমাদের চাকচিক্যে মোহিত হয়ে হারামকেই হালাল ভাবা।
৪.আত্মপরিচয় হারানো মুসলিমরা আজ ইসলামি আদর্শ ভুলে গেছে,আমার পরিচয় একজন মুসলিম কথাটিই এখন লজ্জার বিষয় হয়ে গেছে।
ইহুদি-পশ্চিমা আগ্রাসন থেকে বাঁচার উপায়
১. কুরআন-সুন্নাহ ভিত্তিক চিন্তা ও জীবন গঠন, কুরআন অধ্যয়ন ও আমল করা, রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর সিরাত নিয়ে গবেষণা করা, আকিদা ও তাকওয়ার ভিত গড়ার দিকে মনোযোগ
২. ইসলামি শিক্ষা ও সংস্কৃতির পুনর্জাগরণ, দ্বীনি মাদরাসা, ইসলামিক স্কুল, হালাল সংস্কৃতি গঠন সাহিত্য, মিডিয়া ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে মুসলিমদের অংশগ্রহণ ৩.আর্থিক মুক্তি সুদমুক্ত ব্যবসা, যাকাত ব্যবস্থা, ইসলামি ব্যাংকিং প্রসার উম্মাহভিত্তিক অর্থনৈতিক একতা গঠন (উদাহরণ: মুসলিম দেশগুলোর মধ্যকার লেনদেন ইসলামি ভিত্তিতে) ‘
৪. ঐক্য ও নেতৃত্বে প্রত্যাবর্তন উম্মাহর ঐক্য ও খেলাফত চেতনার পুনরুত্থান, মুসলিম রাষ্ট্রনেতাদের দ্বীনি দায়িত্বে প্রত্যাবর্তন ৫. পশ্চিমা চিন্তা ও জীবনধারা থেকে বেরিয়ে আসা লিবারেল চিন্তা, সেক্যুলারিজম ও নারীবাদকে প্রত্যাখ্যান, মুসলিম পরিচয় ও ইসলামি মূল্যবোধে গর্ববোধ করা
ইহুদি ও পশ্চিমারা মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে একটি আদর্শিক ও বাস্তবিক যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। এ যুদ্ধ অস্ত্রের নয়, বরং চিন্তা, সংস্কৃতি, ধর্ম ও নেতৃত্বের বিরুদ্ধে।
এ যুদ্ধ থেকে বাঁচতে হলে মুসলমানদের ফিরে যেতে হবে তাদের মূল শক্তির উৎসে, আল্লাহর কুরআন ও রসুলের সুন্নাহর দিকে। إِن تَنصُرُوا اللَّهَ يَنصُرْكُمْ وَيُثَبِّتْ أَقْدَامَكُمْ তোমরা যদি আল্লাহর সাহায্য করো, তবে আল্লাহ তোমাদের সাহায্য করবেন এবং তোমাদের পদসমূহকে সুদৃঢ় করবেন। (সুরা মুহাম্মদ:৭)