বৈরী আবহাওয়ার ঘাটে নোঙর করে আছে শত শত ট্রলার, হাকডাক নেই জেলে পল্লীতে।

- আপডেট সময় : ০৮:০০:২৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫ ২৫ বার পড়া হয়েছে
ভরা মৌসুমেও ইলিশ শিকারে বাধা বৈরী আবহাওয়া। বৈরী আবহাওয়ার কবলে পড়ে খাপড়াভাঙ্গা নদীর দু’পাশে নোঙ্গর করে বসে আছেন শত শত ট্রলার। সামুদ্রিক মাছ শিকারের ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হতে না হতেই বৈরী আবহাওয়া হতাশা নিয়ে ঘাটে রয়েছেন জেলেরা।
সামুদ্রিক মাছ আহরণের উপর সরকারের ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞার রেষ কাটিয়ে উঠলেও বৈরী আবহাওয়া ইলিশ শিকারে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। ফলে বারবার লোকসান গুনছেন উপকূলের জেলেরা। নিষেধাজ্ঞা শেষে ইলিশের খোঁজে ছুটেও ভাগ্য তাদের সহায় হয়নি। বর্তমানে অলস সময় পার করছেন জেলেরা। হাকডাক বিহীন শুনশান নীরবতা জেলে পল্লীতে।
মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে পায়রা সমুদ্র বন্দরের ওপর দিয়ে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ায় বন্দরে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে পটুয়াখালী আবহাওয়া অফিস। তাই দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে। ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞায় সরকারি তেমন প্রণোদনা পাননি জেলেরা। কোন কোন জেলে পরিবারের ঈদের আনন্দ ম্লান করেছে নিষেধাজ্ঞা। নিষেধাজ্ঞার পরে বৈরী আবহাওয়া এ যেন মরার উপর খরার ঘাঁ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মায়ের দোয়া বোটের মাঝি কলিম জানান, বছরের বেশিরভাগ সময়ে এভাবে অবরোধ আর আবহাওয়া খারাপ থাকায় আমাদের পেশা বিলীন হয়ে যাবে। আমরা অবরোধ শেষে সাগরে যেতে ২ দিনের মধ্যে আবার আবহাওয়া জনিত কারণে ফিরে আসলাম। কোন ইলিশের দেখা পায়নি, তৈল এবং বাজারের টাকা লস হয়ে গেল।
জেলে মোস্তফা হাওলাদার বলেন, বছরের বেশিরভাগ সময়ই বৈরী আবহাওয়া, ঘন কুয়াশা, সরকারের দুই ধাপের অবরোধ সব মিলিয়ে কিছুদিন মাছ ধরার সময় পাই, তবে আশানুরূপ ইলিশ ধরা না পড়ায় অনেকেই এ পেশা ছেড়েছেন। মাঝি, জেলে, আড়ৎদাররা প্রতিনিয়ত ধার দেনায় জর্জরিত হচ্ছেন।
আলিপুর মৎস্য আড়ৎদার মালিক সমিতির সভাপতি জলিল ঘরামী বলেন, বিগত বছরগুলোতে তেমনি ইলিশের দেখা পাইনি। কয়েক বছর দেনার বোঝা বেড়েই চলছে। ৪-৫ লাখ টাকা বাজার নিয়ে ট্রলার সমুদ্রে পাঠাই এসে বিক্রি করে দেড় থেকে ২ লাখ টাকা। কখনো শূন্য হাতে ফিরে আসে, প্রত্যেকটি ট্রিপ দুই তিন লাখ টাকা লোকসান হচ্ছে। লাখ লাখ টাকা দাদন দেয়ায় এ পেশা পরিবর্তন করতে পারছি না।
আলিপুর বন্ধন ফিসের স্বত্বাধিকারী আয়নাল খান বলেন, ব্যাংক থেকে লোন করে ও সুদে টাকা এনে জেলেদেরকে দাদন দিয়েছি মাছ ধরার জন্য। কিন্তু আবহাওয়া খারাপ থাকার কারণে জেলেরা সমুদ্র থেকে জাল গুটিয়ে ঘাটে ফিরে এসেছে। এখন বেকার হয়ে পড়েছে মৎস্য সংশ্লিষ্ট সকল ব্যবসায়ীরা। অলস সময় পার করছে অনেকেই অন্য পেশায় জড়িয়েছে। এভাবে মাছ না পেলে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া ছাড়া কোন উপায় থাকবে না।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, গত মৌসুমের তুলনায় এবার বেশি ইলিশ আহরণ সম্ভব হবে। তাই আবহাওয়া অনুকূলে এলেই আবারও শিকারে গভীর সমুদ্রে যাবেন জেলেরা। তাদের জালে আশানারূপ মাছ ধরা পড়বে।