বাড়তি সেবা দিতে চিকিৎসকরাই এখন রোগী, মাত্র ১ জন মেডিকল চিকিৎসক দিয়ে চলছে কলাপাড়ার চিকিৎসা সেবা।

- আপডেট সময় : ০৮:৩৭:২৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫ ৩৬ বার পড়া হয়েছে
দীর্ঘদিন ধরে পটুয়াখালীর কলাপাড়া হাসপাতালে রয়েছে চিকিৎসক সংকট। তাই নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বেশি সময় ধরে বাড়তি সেবা দিতে গিয়ে চিকিৎসরাই হয়ে পড়ছেন রোগী। এদিকে চিকিৎসক সংকটে কাংখিত সেবা না পেয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন রোগীরা। দ্রুত সময়ের মধ্যে এ হাসপাতালে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক নিয়োগের দাবি সংশ্লিষ্টদের।
পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় পায়রা বন্দর, তিনটি তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও সাবমেরিন ক্যাবল ল্যান্ডিং স্টেশনসহ বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্পে কর্মরত রয়েছে দেশী বিদেশী হাজার হাজার শ্রমিক। এসব শ্রমিক সহ কলাপাড়া ও পার্শ্ববর্তী উপজেলা রাঙ্গাবালীর প্রায় ৪ লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবার একমাত্র আশ্রয়স্থল কলাপাড়া ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল। বছরের অধিকাংশ সময়ে রোগীতে টইটুম্বুর থাকে এ হাসাপাতালটি। অনেক সময় ওয়ার্ডে সিট না পেয়ে রোগীরা চিকিৎসা নেয় হাসপাতালের মেঝে কিংবা করিডোরে। অথচ এ হাসাপতালে চিকিৎসকের ৩৬ পদের মধ্যে ২৭ পদই শূন্য। আর ৯ জনের মধ্যে ২ জন ঢাকায় সংযুক্তিতে, ২ জন বুনিয়াদি প্রশিক্ষনে ও ১ জন রয়েছের মাতৃত্বকালীন ছুটিতে। বর্তমানে মাত্র ৪ জন চিকিৎসক রয়েছে এ হাসপাতালে। এর মধ্যে উপেজলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে বেশির ভাগ সময় ব্যস্ত থাকতে হয় দাপ্তরিক কাজে।
এছাড়া দুইজন রয়েছেন জুনিয়র কনসালটেন্ট হিসেবে। এরমধ্যে একজন শিশু বিশেষজ্ঞ এবং অপরজন রয়েছেন গাইনী ও অবস বিশেষজ্ঞ। যাদের কাজ শুধুমাত্র রেফার অর্থাৎ জটিল রোগের শিশু এবং গাইনী বিষয়ে রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেয়া। আর শুধুমাত্র একজন রয়েছেন মেডিকেল অফিসার। যার আউটডোর, ইনডোর ও জরুরী বিভাগের চিকিৎসা সেবা দেয়ার কথা। তারপরও এই চার চিকিৎসক সময় ভাগ করে চালাচ্ছেন পুরো ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা। নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বেশি সময় ধরে চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে এসবও চিকিৎসকরা নিজেরাই এখন হয়ে পড়ছেন অসুস্থ। বার বার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেও পাননি সুরাহা। এদিকে কাংখিত চিকিৎসা সেবা না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছন হাসপাতালে ভর্তি রোগী ও তাদের স্বজনরা।

কলাপাড়া হাসাপতালের পুরুষ ওয়ার্ডে ভর্তি রোগী মুরাদ হোসেন বলেন, মঙ্গলবার দুপুরে জ্বর ও শাসকষ্ট নিয়ে এখানে ভর্তি হয়েছি। আজ সকালে শুধু একজন ডাক্তার এসে দেখে গেছে। এখানে ডাক্তারের সংকট থাকার কারনে আমরা ঠিকমতো সেবা পাচ্ছিনা। শিশু ওয়ার্ডের ভর্তি রোগী জুবাইদার (৫ মাস) স্বজন (নানু) হোসনেয়ারা বলেন, এখানে শুধু একজন শিশু রোগের চিকিৎসক রয়েছেন। তিনি এতো শিশু রোগীদের কিভাবে সেবা দিবেন। নার্সরা তো সব বোঝেনা। এখানে নাতীকে ভর্তি করানোর পর আমাদের প্রেসক্রিপশন নিয়ে বেশ কয়েকবার ডাক্তারের পার্সোনাল চেম্বারে গিয়ে ঔষধ লিখে নিয়ে আসতে হয়েছে। আমরা এ হাসপাতালের চিকিৎসক সংকটের সমাধান চাই।
কলাপাড়া হাসপাতালের জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনী ও অবস) ডা. শরীফ শায়লা ইসলাম বলেন, আমাদের এখানে প্রচুর চিকিৎসক সংকট। যার কারনে অতিরিক্ত সময় ধরে সেবা দিতে গিয়ে আমি নিজেই এখন অসুস্থ হয়ে পরেছি। শরীরে জ্বর উঠেছে। আপনারা আসার খবর পেয়ে পরে আসতে বলেছি। ঔষধ খেয়ে জ্বর কমিয়ে এখন আপনাদের সঙ্গে কথা বলছি। এভাবে আসলে রোগীদের যথাযথ চিকিৎসা সেবা দেয়া কোনভাবেই সম্ভব নয়।
অপর জুনিয়র কনসালটেন্ট (পেডিয়াট্রক্স) ডা. কামরুননাহার মিলি বলেন, আমাদের তো আসলে আউটডোরে চিকিৎসা সেবা দেয়ার কথা না। তারপরও সংকটের কারনে দিয়ে দাচ্ছি। আর অতিরিক্ত সময় ধরে সেবা দিতে গিয়ে আমি নিজেই এখন অসুস্থ হয়ে পরেছি। এতো বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ এলাকার দিক বিবেচনা করা হলেও উর্ধবতন কর্তৃপক্ষকে চিকিৎসক সংকট সমাধানের অনুরোধ জানাচ্ছি। এতো সংকটে আসলে রোগীদের কাংখিত সেবা দেয়া কোনভাবেই সম্ভব নয়। কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জুনায়েদ হোসেন লেলীন বলেন, চিকিৎসক সংকটের ব্যাপারে বার বার উর্ধবতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে এমনি চিঠি দিয়েও এর সুরাহা পাইনি।
পটুয়াখালী সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ খালেদুর রহমান মিয়া বলেন, শুধু কলাপাড়া নয় পুরো জেলা জুড়েই চিকিৎসক সংকট রয়েছি। বিষয়টি আমি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। আশা করছি দ্রুত এর সমাধান হবে।