ঢাকা ০৮:২৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ অগাস্ট ২০২৫, ৩০ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
গোপালগঞ্জে সনাতন ধর্ম থেকে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করে মুসলিম ছেলেকে বিয়ে করায় হামলা, অত্যাচার ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে তালাবদ্ধ করার -প্রতিবাদে সংবাদ-সম্মেলন করেছেন ভুক্তভোগীতুবা আলমগীর ইসলাম ধর্ম ও রাসুলুল্লাহ (সাঃ)কে নিয়ে কটূক্তি করার প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত। গোবিন্দগঞ্জে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মশালা অনুষ্ঠিত পাটগ্রাম সীমান্তে দিয়ে ফের শিশুসহ ৭জনকে বিএসএফের পুশইন। সিএসএস-এমএফপি’র আয়োজনে কৃতি শিক্ষার্থী সংবর্ধনা লালমনিরহাটের বাঁশ শিল্পীরা অন্য পেশায় ঝুঁকছেন। সনাতন ধর্ম থেকে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করে মুসলিম ছেলেকে বিয়ে করায় হামলা কলাপাড়ায় বিয়ের দাবিতে প্রেমিকের বাড়িতে প্রেমিকার অবস্থান দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ, কলাপাড়া শ্রমিক দল  নেতা সোহেল দেওয়ানকে বহিষ্কার দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ,অনৈতিক কার্মকান্ডে জড়িত থাকায় সোহেল দেওয়ান কে শ্রমিক দলের সদস্য পদ ও সাংগঠনিক পদ থেকে ষ্কার করা হয়েছে।
সংবাদ শিরোনাম ::
গোপালগঞ্জে সনাতন ধর্ম থেকে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করে মুসলিম ছেলেকে বিয়ে করায় হামলা, অত্যাচার ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে তালাবদ্ধ করার -প্রতিবাদে সংবাদ-সম্মেলন করেছেন ভুক্তভোগীতুবা আলমগীর ইসলাম ধর্ম ও রাসুলুল্লাহ (সাঃ)কে নিয়ে কটূক্তি করার প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত। গোবিন্দগঞ্জে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মশালা অনুষ্ঠিত পাটগ্রাম সীমান্তে দিয়ে ফের শিশুসহ ৭জনকে বিএসএফের পুশইন। সিএসএস-এমএফপি’র আয়োজনে কৃতি শিক্ষার্থী সংবর্ধনা লালমনিরহাটের বাঁশ শিল্পীরা অন্য পেশায় ঝুঁকছেন। সনাতন ধর্ম থেকে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করে মুসলিম ছেলেকে বিয়ে করায় হামলা কলাপাড়ায় বিয়ের দাবিতে প্রেমিকের বাড়িতে প্রেমিকার অবস্থান দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ, কলাপাড়া শ্রমিক দল  নেতা সোহেল দেওয়ানকে বহিষ্কার দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ,অনৈতিক কার্মকান্ডে জড়িত থাকায় সোহেল দেওয়ান কে শ্রমিক দলের সদস্য পদ ও সাংগঠনিক পদ থেকে ষ্কার করা হয়েছে।

বর্ষার আগেই ঝুঁকিপূর্ণ বেরিবাঁধ নিয়ে উপকূল বাসীর শঙ্কা,আশ্রয়হীন হয়ে পড়বে  হাজারো মানুষ

কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি/এফ.বি
  • আপডেট সময় : ০৫:৩০:৪২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫ ৩০ বার পড়া হয়েছে
অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

পটুয়াখালীর উপকূলীয় এ জনপদ স্বভাবগত ভাবেই, প্রায় প্রতি বছরই প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে। তাছাড়া বর্ষায় নদীতে জোয়ারের পানি বাড়লে বাঁধে ভাঙন তৈরি হয়, বাঁধ ভাঙে। প্লাবিত হয় বিস্তীর্ণ এলাকা। নষ্ট হয় ঘরবাড়ি ফসল। ভিটেবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয় মানুষ।’ ভাসিয়ে নেয় হাজারো মানুষের বসতি, কেড়ে জীবন-জীবিকা। 

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমাদের উপকূল এলাকা বসবাসের জন্য দিন দিন কঠিন হয়ে উঠছে। টেকসই বাঁধের অভাব এ পরিস্থিতিকে আরও নাজুক করে তুলেছে। জীবন-জীবিকা বাঁচিয়ে রাখতে উপকূলীয় বিভিন্ন অঞ্চলে বাঁধের জন্য মানুষের আকুতির শেষ নেই। স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ নির্মাণ করলেও তা বেশি দিন থাকছে না।কলাপাড়া উপজেলার আয়তন ৪৯২.১০ বর্গকি.মি। ১২টি ইউনিয়ন ও দু’টি পৌরসভা, ২৪৪টি গ্রাম রয়েছে এখানে। উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে বিভিন্ন নদীতে পানি বৃদ্ধির ফলে ভাঙন দেখা দিয়েছে। নদীতে তলিয়ে যেতে শুরু করেছে নদীর তীরবর্তী ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি। বর্ষা মৌসুমের আগেই রাবনাবাঁধ, আন্দারমানিক ভাঙ্গনে দিশেহারা নদী তীরবর্তী বাসিন্দা। ইতোমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হতে শুরু করেছে বসতভিটা আবাদী জমিসহ বিভিন্ন স্থাপনা।

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপকূলীয় অঞ্চলের অধিকাংশ বেড়িবাঁধই খুব নাজুক। বেড়িবাঁধের কোথাও কোথাও মাত্র দুই থেকে তিন ফুট চওড়া মাটির বাঁধ রয়েছে। এমন দুর্বল বেড়িবাঁধ ভেঙে যেতে পারে-এই আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন উপকূলবাসী। কেউ হারিয়েছেন বসত ঘর, কেউ জমি জমা, কেউ বা পুকুর কিংবা মাছের ঘের। প্রতিনিয়ত জীবনের সাথে যুদ্ধ করে চলা এসব মানুষ আয়ের উৎস আর মাথা গোঁজার শেষ সম্বল হারিয়ে আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছেন। কোথায় আশ্রয় নেবেন আর কিভাবে ঘুরে দাঁড়াবেন এমন চিন্তার ছাপ তাদের চোখ মুখে। অনিশ্চিয়তার মধে দিন কাটছে তাদের। চেনা জনপদকে এখন মনে হয় অচেনা। উচু বেড়িবাঁধ কৃষি জমির চেয়েও নিচু হয়ে গেছে স্থান পরিবর্তন করে নতুন জমিতে বাড়ী নির্মানের সংগতি না থাকায় এ জনপদে মানুষ এখন দায় ঠেকে বসতি রেখেছেন। আসছে বর্ষা মৌসুম। তার আগেই বাঁধ নির্মানের দাবি জানান ভুক্তভোগী মানুষ। এতে যদি নিজেদের শ্রম দিতে হলেও তারা রাজি।    

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কলাপাড়ার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, কলাপাড়া উপজেলার ৫৪/এ পোল্ডারের ১৩.০০ কিমি থেকে ১৪.১২০ কিমি পর্যন্ত মোট ১,১২০ মিটার বেড়িবাঁধ রক্ষায় জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ও জিও টিউব বসানো হয়। এ প্রকল্পে ব্যয় হয় প্রায় দেড় কোটি টাকা।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চম্পাপুর ইউনিয়নে করমজাতলা গ্রামে রাবনাবাদ নদী পাড়ে বেড়িবাঁধ রক্ষায় দেওয়া হয়েছে জরুরি ‘জিওব্যাগ ও টিউব। তাও আবার চার মাসের মাথায় বিভিন্ন পয়েন্টে দেখা দিয়েছে ধস। ঢেউয়ের আঘাতে ব্যাগ ছিঁড়ে বের হয়ে গেছে বালু, আর বাঁধের স্লপ দ্রুত ধসে পড়েছে। এমন অবস্থা হয়েছে করমজাতলা গ্রামে রাবনাবাদ নদী পাড়ের ৫৪/এ পোল্ডারের। এদিকে নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষের মাঝে আতঙ্কে বেড়ে গেছে। এখন আকাশে মেঘ দেখলেই আতকে উঠেন তারা। কারণ, এসব মানুষেরা স্বচক্ষে দেখেছেন বিভিন্ন সময়ে বয়ে যাওয়া প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড়ের ভয়াবহতা। তাঁদের আশঙ্কা, যে কোনো সময় মূল বাঁধটি ধসে গিয়ে প্লাবন হতে পারে। 

সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, প্রটেকশনের কাজে ব্যবহার করা হয়েছে নিম্নমানের জিও ব্যাগ ও পুরনো, ছেঁড়া জিও টিউব। এতে নদীর ঢেউয়ের আঘাতে ব্যাগ ছিঁড়ে বালু বের হয়ে গেছে, আর বাঁধের স্লপ দ্রুত ধসে পড়েছে। তাঁদের আশঙ্কা, এভাবে চললে পুরো বাঁধ বর্ষা আসার আগেই বিলীন হয়ে যেতে পারে। এ দিকে রাবনাবাদ নদীর করমজাতলা,আন্দারমানিক নদীর নিজামপুর এলাকায় বেড়িবাঁধ রক্ষায় দেওয়া জরুরি ‘জিও ব্যাগ ও টিউব’-এ চার মাসের মাথায় ধস দেখা দিয়েছে। এতে বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই আতঙ্কে পড়েছেন নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষ। তারা বলছেন, এই অবস্থায় যে কোনো সময় মূল বাঁধও ধসে গিয়ে প্লাবনের আশঙ্কা তৈরি হবে। 

প্রতিবছর বর্ষা আসলেই রাবনাবাদ নদীর ভাঙনে তাঁরা আতঙ্কে থাকেন। অথচ দীর্ঘদিনেও এখানে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ হয়নি। এবারও জরুরি কাজ ধসে পড়ায় তাঁরা ক্ষুব্ধ।

সরকারি উদ্যোগে দ্রুত টেকসই বাঁধ নির্মাণ না হলে পুরো করমজাতলা ও আশপাশের গ্রাম গুলো যেকোনো সময় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সবাই।

মাত্র কয়েক মাস হয় বেড়িবাঁধ রক্ষায় জরুরি ভাবে ‘জিওব্যাগ ও টিউব স্থাপন করেন পানি উন্নয়ন বোর্ড। এর মধ্যেই রাবনাবাদ নদী ঢেউয়ের আঘাতে অনেকগুলো টিউব ছেঁড়ি বের হয়ে গেছে বালু। বর্তমানে জোয়ারের উচ্ছতা বেড়ে গেছে। এছাড়া পূর্ণিমা, অমাবস্যা কিংবা অতিবৃষ্টি হলেই এসব জিওব্যাগ ও টিউব আরও ক্ষতি গ্রস্থ হবে। তবে দ্রুত টেকসই বাঁধ নির্মানের দাবি করেছেন তিনি।

সূত্র মতে, দেড় যুগের অধিক সময় ধরে নদীর ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যে ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে অসংখ্য রাস্তাঘাট, হাজার হাজার একর ফসলি জমি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বহু স্থাপনা। 

ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ মেরামত করতে না পারায় উপকূলের অনেক লোকালয়ে এখনো চলছে জোয়ার ভাটা। ফলে নদীর সাথে তাল মিলিয়ে রীতিমতো জোয়ার ভাটার মধ্যে বসবাস করছে উপকূলীয় দুর্গত জনপদের হাজার হাজার পরিবার। উপকূলের মানুষ বাধ্য হয়ে উঁচু বাঁধের ওপর মানবেতর জীবনযাপন করছে। তবে দ্রুত স্থায়ী ও টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা না হলে নদীতে বিলীন হয়ে যাবে উপকূলের অনেক গ্রাম। 

স্থানীয় বাসিন্দার জানান, প্রতিবছর বর্ষা আসলেই রাবনাবাদ নদীর ভাঙনে আতঙ্কে থাকেন তারা। এ ছাড়া পূর্ণিমা, অমাবস্যা কিংবা অতিবৃষ্টি হলেই নদীপাড়ের এসব মানুষের দুর্ভোগ বেড়ে যায়। অথচ দীর্ঘদিনেও এখানে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ হয়নি। তাদের দাবি সরকারি উদ্যোগে দ্রুত টেকসই বাঁধ নির্মানের। তা না হলে যে কোনো সময় বাধেঁ আশ পাশের গ্রাম গুলো নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে। একই সাথে তারা অভিযোগ করেন রাবনাবাদ নদীতে বছরের পর বছর ড্রেজিংয়ের কারণে এখানে ভাঙন আরও বেড়েছে। ২০০৭ সালের সিডর, এর পর আইলা, মহাসেন, আম্পান তারা মোকাবেলা করেছেন। এছাড়া কয়েক দফা নদী ভাঙন তাদের গৃহহারা করে ফেলেছে বলে রাবনাবাদ নদী পড়ের বাসিন্দা জানান। 

করমজাতলার বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, আমরা দেখেছি, অনেক গুলো টিউব ছেঁড়া। নিচে জিও ব্যাগ না থাকায় সাপোর্টও ছিল না। বর্ষা নামলে বড় বিপদ হবে।

 আরেক বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, রাবনাবাদ নদীতে বছরের পর বছর ড্রেজিংয়ের কারণে এখানে ভাঙন আরও বেড়েছে। অথচ জরুরি প্রটেকশনে টেকসই কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। 

নিজামপুরের ইসাহাক হাওলাদার বলেন আমরাদের বেরিবাধ তিনবার নদীতে বিলিন হয়ে গেছে, এখন আমরা স্হায়ী বেরিবাধ চাই।

 উপকূলের বাসিন্দারা বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধের বিষয়টি জনপ্রতিনিধিদের জানালেও তাঁরা শুধু আশ্বাস দেন। বাঁধ মেরামতে কেউ উদ্যোগ নেন না। বর্ষায় যখন জোয়ারের পানি বাঁধ উপচে পড়ার উপক্রম হয়, তখন মেরামতে উদ্যোগ নেয় কর্তৃপক্ষ। এতে একদিকে কাজের ব্যয় বাড়ে, অন্যদিকে কাজ হয় নিম্নমানের। প্রায় সময় বাঁধ ভেঙে এলাকা প্লাবিত হয়। 

জনপ্রতিনিধিদের দাবি, পরিকল্পিত ও স্থায়ী বাঁধ নির্মিত না হওয়ায় প্রতিবছর ভাঙন দেখা দেয়। এ জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তাদের গাফিলতিই দায়ী।

পাউবো কলাপাড়ার উপসহকারী প্রকৌশলী বিদ্যা রতন সরকার বলেন, ওই স্পটটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। উত্তাল ঢেউয়ের কারণে প্রটেকশন দেওয়া হয়েছিল। মাটি সংকট ছিল, অনেক দূর থেকে সংগ্রহ করতে হয়েছে। তবুও আমরা কাজটি সুন্দর ভাবে করেছি। তবে তিনি স্বীকার করেন, স্পটটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সেখানে স্থায়ী প্রটেকশনের জন্য ব্লক বসানো দরকার।

চম্পাপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. রিন্টু তালুকদার জানান, করমজাতলার বেরিবাঁধ কয়েকবার মেরামত করা হয়েছে। কিন্তু কোন কাজে আসছে না। ওই বেরিবাঁধটি ভাল ভাবে প্রটেকশন দিতে পাড়লে বেরিবাঁধটি স্থায়ী হবে। আসছে বর্ষা মৌসুম

। তার আগেই বাঁধ নির্মানের দাবি তার।

পাউবো’র উপবিভাগীয় প্রকৌশলী শাহ আলম ভূঁইয়া জানান, ওই জায়গাটা ক্রিটিক্যাল। ভেতরে জায়গা নেই, মাটিরও সংকট। স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ ছাড়া এখানে ভাঙন রোধ করা সম্ভব নয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

বর্ষার আগেই ঝুঁকিপূর্ণ বেরিবাঁধ নিয়ে উপকূল বাসীর শঙ্কা,আশ্রয়হীন হয়ে পড়বে  হাজারো মানুষ

আপডেট সময় : ০৫:৩০:৪২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫

পটুয়াখালীর উপকূলীয় এ জনপদ স্বভাবগত ভাবেই, প্রায় প্রতি বছরই প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে। তাছাড়া বর্ষায় নদীতে জোয়ারের পানি বাড়লে বাঁধে ভাঙন তৈরি হয়, বাঁধ ভাঙে। প্লাবিত হয় বিস্তীর্ণ এলাকা। নষ্ট হয় ঘরবাড়ি ফসল। ভিটেবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয় মানুষ।’ ভাসিয়ে নেয় হাজারো মানুষের বসতি, কেড়ে জীবন-জীবিকা। 

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমাদের উপকূল এলাকা বসবাসের জন্য দিন দিন কঠিন হয়ে উঠছে। টেকসই বাঁধের অভাব এ পরিস্থিতিকে আরও নাজুক করে তুলেছে। জীবন-জীবিকা বাঁচিয়ে রাখতে উপকূলীয় বিভিন্ন অঞ্চলে বাঁধের জন্য মানুষের আকুতির শেষ নেই। স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ নির্মাণ করলেও তা বেশি দিন থাকছে না।কলাপাড়া উপজেলার আয়তন ৪৯২.১০ বর্গকি.মি। ১২টি ইউনিয়ন ও দু’টি পৌরসভা, ২৪৪টি গ্রাম রয়েছে এখানে। উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে বিভিন্ন নদীতে পানি বৃদ্ধির ফলে ভাঙন দেখা দিয়েছে। নদীতে তলিয়ে যেতে শুরু করেছে নদীর তীরবর্তী ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি। বর্ষা মৌসুমের আগেই রাবনাবাঁধ, আন্দারমানিক ভাঙ্গনে দিশেহারা নদী তীরবর্তী বাসিন্দা। ইতোমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হতে শুরু করেছে বসতভিটা আবাদী জমিসহ বিভিন্ন স্থাপনা।

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপকূলীয় অঞ্চলের অধিকাংশ বেড়িবাঁধই খুব নাজুক। বেড়িবাঁধের কোথাও কোথাও মাত্র দুই থেকে তিন ফুট চওড়া মাটির বাঁধ রয়েছে। এমন দুর্বল বেড়িবাঁধ ভেঙে যেতে পারে-এই আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন উপকূলবাসী। কেউ হারিয়েছেন বসত ঘর, কেউ জমি জমা, কেউ বা পুকুর কিংবা মাছের ঘের। প্রতিনিয়ত জীবনের সাথে যুদ্ধ করে চলা এসব মানুষ আয়ের উৎস আর মাথা গোঁজার শেষ সম্বল হারিয়ে আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছেন। কোথায় আশ্রয় নেবেন আর কিভাবে ঘুরে দাঁড়াবেন এমন চিন্তার ছাপ তাদের চোখ মুখে। অনিশ্চিয়তার মধে দিন কাটছে তাদের। চেনা জনপদকে এখন মনে হয় অচেনা। উচু বেড়িবাঁধ কৃষি জমির চেয়েও নিচু হয়ে গেছে স্থান পরিবর্তন করে নতুন জমিতে বাড়ী নির্মানের সংগতি না থাকায় এ জনপদে মানুষ এখন দায় ঠেকে বসতি রেখেছেন। আসছে বর্ষা মৌসুম। তার আগেই বাঁধ নির্মানের দাবি জানান ভুক্তভোগী মানুষ। এতে যদি নিজেদের শ্রম দিতে হলেও তারা রাজি।    

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কলাপাড়ার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, কলাপাড়া উপজেলার ৫৪/এ পোল্ডারের ১৩.০০ কিমি থেকে ১৪.১২০ কিমি পর্যন্ত মোট ১,১২০ মিটার বেড়িবাঁধ রক্ষায় জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ও জিও টিউব বসানো হয়। এ প্রকল্পে ব্যয় হয় প্রায় দেড় কোটি টাকা।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চম্পাপুর ইউনিয়নে করমজাতলা গ্রামে রাবনাবাদ নদী পাড়ে বেড়িবাঁধ রক্ষায় দেওয়া হয়েছে জরুরি ‘জিওব্যাগ ও টিউব। তাও আবার চার মাসের মাথায় বিভিন্ন পয়েন্টে দেখা দিয়েছে ধস। ঢেউয়ের আঘাতে ব্যাগ ছিঁড়ে বের হয়ে গেছে বালু, আর বাঁধের স্লপ দ্রুত ধসে পড়েছে। এমন অবস্থা হয়েছে করমজাতলা গ্রামে রাবনাবাদ নদী পাড়ের ৫৪/এ পোল্ডারের। এদিকে নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষের মাঝে আতঙ্কে বেড়ে গেছে। এখন আকাশে মেঘ দেখলেই আতকে উঠেন তারা। কারণ, এসব মানুষেরা স্বচক্ষে দেখেছেন বিভিন্ন সময়ে বয়ে যাওয়া প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড়ের ভয়াবহতা। তাঁদের আশঙ্কা, যে কোনো সময় মূল বাঁধটি ধসে গিয়ে প্লাবন হতে পারে। 

সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, প্রটেকশনের কাজে ব্যবহার করা হয়েছে নিম্নমানের জিও ব্যাগ ও পুরনো, ছেঁড়া জিও টিউব। এতে নদীর ঢেউয়ের আঘাতে ব্যাগ ছিঁড়ে বালু বের হয়ে গেছে, আর বাঁধের স্লপ দ্রুত ধসে পড়েছে। তাঁদের আশঙ্কা, এভাবে চললে পুরো বাঁধ বর্ষা আসার আগেই বিলীন হয়ে যেতে পারে। এ দিকে রাবনাবাদ নদীর করমজাতলা,আন্দারমানিক নদীর নিজামপুর এলাকায় বেড়িবাঁধ রক্ষায় দেওয়া জরুরি ‘জিও ব্যাগ ও টিউব’-এ চার মাসের মাথায় ধস দেখা দিয়েছে। এতে বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই আতঙ্কে পড়েছেন নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষ। তারা বলছেন, এই অবস্থায় যে কোনো সময় মূল বাঁধও ধসে গিয়ে প্লাবনের আশঙ্কা তৈরি হবে। 

প্রতিবছর বর্ষা আসলেই রাবনাবাদ নদীর ভাঙনে তাঁরা আতঙ্কে থাকেন। অথচ দীর্ঘদিনেও এখানে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ হয়নি। এবারও জরুরি কাজ ধসে পড়ায় তাঁরা ক্ষুব্ধ।

সরকারি উদ্যোগে দ্রুত টেকসই বাঁধ নির্মাণ না হলে পুরো করমজাতলা ও আশপাশের গ্রাম গুলো যেকোনো সময় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সবাই।

মাত্র কয়েক মাস হয় বেড়িবাঁধ রক্ষায় জরুরি ভাবে ‘জিওব্যাগ ও টিউব স্থাপন করেন পানি উন্নয়ন বোর্ড। এর মধ্যেই রাবনাবাদ নদী ঢেউয়ের আঘাতে অনেকগুলো টিউব ছেঁড়ি বের হয়ে গেছে বালু। বর্তমানে জোয়ারের উচ্ছতা বেড়ে গেছে। এছাড়া পূর্ণিমা, অমাবস্যা কিংবা অতিবৃষ্টি হলেই এসব জিওব্যাগ ও টিউব আরও ক্ষতি গ্রস্থ হবে। তবে দ্রুত টেকসই বাঁধ নির্মানের দাবি করেছেন তিনি।

সূত্র মতে, দেড় যুগের অধিক সময় ধরে নদীর ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যে ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে অসংখ্য রাস্তাঘাট, হাজার হাজার একর ফসলি জমি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বহু স্থাপনা। 

ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ মেরামত করতে না পারায় উপকূলের অনেক লোকালয়ে এখনো চলছে জোয়ার ভাটা। ফলে নদীর সাথে তাল মিলিয়ে রীতিমতো জোয়ার ভাটার মধ্যে বসবাস করছে উপকূলীয় দুর্গত জনপদের হাজার হাজার পরিবার। উপকূলের মানুষ বাধ্য হয়ে উঁচু বাঁধের ওপর মানবেতর জীবনযাপন করছে। তবে দ্রুত স্থায়ী ও টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা না হলে নদীতে বিলীন হয়ে যাবে উপকূলের অনেক গ্রাম। 

স্থানীয় বাসিন্দার জানান, প্রতিবছর বর্ষা আসলেই রাবনাবাদ নদীর ভাঙনে আতঙ্কে থাকেন তারা। এ ছাড়া পূর্ণিমা, অমাবস্যা কিংবা অতিবৃষ্টি হলেই নদীপাড়ের এসব মানুষের দুর্ভোগ বেড়ে যায়। অথচ দীর্ঘদিনেও এখানে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ হয়নি। তাদের দাবি সরকারি উদ্যোগে দ্রুত টেকসই বাঁধ নির্মানের। তা না হলে যে কোনো সময় বাধেঁ আশ পাশের গ্রাম গুলো নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে। একই সাথে তারা অভিযোগ করেন রাবনাবাদ নদীতে বছরের পর বছর ড্রেজিংয়ের কারণে এখানে ভাঙন আরও বেড়েছে। ২০০৭ সালের সিডর, এর পর আইলা, মহাসেন, আম্পান তারা মোকাবেলা করেছেন। এছাড়া কয়েক দফা নদী ভাঙন তাদের গৃহহারা করে ফেলেছে বলে রাবনাবাদ নদী পড়ের বাসিন্দা জানান। 

করমজাতলার বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, আমরা দেখেছি, অনেক গুলো টিউব ছেঁড়া। নিচে জিও ব্যাগ না থাকায় সাপোর্টও ছিল না। বর্ষা নামলে বড় বিপদ হবে।

 আরেক বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, রাবনাবাদ নদীতে বছরের পর বছর ড্রেজিংয়ের কারণে এখানে ভাঙন আরও বেড়েছে। অথচ জরুরি প্রটেকশনে টেকসই কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। 

নিজামপুরের ইসাহাক হাওলাদার বলেন আমরাদের বেরিবাধ তিনবার নদীতে বিলিন হয়ে গেছে, এখন আমরা স্হায়ী বেরিবাধ চাই।

 উপকূলের বাসিন্দারা বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধের বিষয়টি জনপ্রতিনিধিদের জানালেও তাঁরা শুধু আশ্বাস দেন। বাঁধ মেরামতে কেউ উদ্যোগ নেন না। বর্ষায় যখন জোয়ারের পানি বাঁধ উপচে পড়ার উপক্রম হয়, তখন মেরামতে উদ্যোগ নেয় কর্তৃপক্ষ। এতে একদিকে কাজের ব্যয় বাড়ে, অন্যদিকে কাজ হয় নিম্নমানের। প্রায় সময় বাঁধ ভেঙে এলাকা প্লাবিত হয়। 

জনপ্রতিনিধিদের দাবি, পরিকল্পিত ও স্থায়ী বাঁধ নির্মিত না হওয়ায় প্রতিবছর ভাঙন দেখা দেয়। এ জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তাদের গাফিলতিই দায়ী।

পাউবো কলাপাড়ার উপসহকারী প্রকৌশলী বিদ্যা রতন সরকার বলেন, ওই স্পটটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। উত্তাল ঢেউয়ের কারণে প্রটেকশন দেওয়া হয়েছিল। মাটি সংকট ছিল, অনেক দূর থেকে সংগ্রহ করতে হয়েছে। তবুও আমরা কাজটি সুন্দর ভাবে করেছি। তবে তিনি স্বীকার করেন, স্পটটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সেখানে স্থায়ী প্রটেকশনের জন্য ব্লক বসানো দরকার।

চম্পাপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. রিন্টু তালুকদার জানান, করমজাতলার বেরিবাঁধ কয়েকবার মেরামত করা হয়েছে। কিন্তু কোন কাজে আসছে না। ওই বেরিবাঁধটি ভাল ভাবে প্রটেকশন দিতে পাড়লে বেরিবাঁধটি স্থায়ী হবে। আসছে বর্ষা মৌসুম

। তার আগেই বাঁধ নির্মানের দাবি তার।

পাউবো’র উপবিভাগীয় প্রকৌশলী শাহ আলম ভূঁইয়া জানান, ওই জায়গাটা ক্রিটিক্যাল। ভেতরে জায়গা নেই, মাটিরও সংকট। স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ ছাড়া এখানে ভাঙন রোধ করা সম্ভব নয়।