আধুনিকতার ছোঁয়ায় পেছনে পড়ে গেলেও ঈদুল আযহায় টুংটাং শব্দে মুখরিত কামারপাড়া

- আপডেট সময় : ০৬:৪৮:৩৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ৪ জুন ২০২৫ ৪০ বার পড়া হয়েছে
আর মাত্র তিনদিন বাকি পবিত্র ঈদুল আযহার। ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হয়ে এদিন পশু কোরবানি করবেন দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। এসব পশুর মাংস কাটতে দা, বটি, ছুরি, চাপাতি ইত্যাদি ধাতব হাতিয়ার অপরিহার্য। আর এসব হাতিয়ার তৈরিতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন কলাপাড়ার কামার শিল্পীরা। দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই বাড়ছে তাদের ব্যস্ততা। দম ফেলার যেন ফুরসত নেই তাদের। পশু জবাইয়ের জন্য ছুরি-চাকু-বটি, চাপাতিসহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদি কিনতে শুরু করেছেন অনেকেই। আবার কেউ কেউ একটু আগেভাগে দা, বটি, ছুরিসহ মাংস কাটার বিভিন্ন সরঞ্জাম শান দিয়ে নিচ্ছেন।
নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস ও কৃষি যন্ত্রপাতি আধুনিক হওয়ায় আমাদের পণ্যের চাহিদা কমেছে। এবার কোরবানির ঈদকে ঘিরে লোহা ও কয়লার দাম বেড়েছে। খরচ বাড়লেও আমাদের আয় বাড়েনি বলে জানান তাঁরা।
এভাবেই ঈদ ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে জমে উঠেছে কামারপাড়া। আধুনিকতার ছোঁয়ায় পেছনে পড়ে গেলেও কোরবানির ঈদ এখনো এই প্রাচীন পেশায় খানিকটা প্রাণ ফেরায়।
সরেজমিন কলাপাড়া উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার ঘুরে দেখা গেছে, হাতুড়ি আর লোহার টুংটাং শব্দে মুখরিত কামার পাড়া। কেউ হাঁপর টানছেন, সেই হাঁপরে পুড়ছে কয়লা, জ্বলছে লোহা। কেউ কেউ হাতুড়ি পিটিয়ে তৈরি করছেন দা, বটি, ছুরিসহ মাংস কাটার বিভিন্ন সরঞ্জাম। ঈদের দিন পর্যন্ত চলবে তাদের এমন ব্যস্ততা।তাই খাওয়া-দাওয়া ভুলে কাজ করছেন তারা। ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে কাজ। সারা বছর তেমন কাজ না থাকলেও কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে কয়েকগুণ ব্যস্ততা বেড়ে যায় কামারদের। প্রতিবছর কোরবানির ঈদে তাদের জিনিসপত্রের কেনা-বেচা বেড়ে যায়। এ থেকে অর্জিত টাকায় সারা বছর চলে সংসার। বছরের বেশিরভাগ সময় কামার শিল্পীদের কাজ কম থাকায় সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। তাই তারা এ সময়টাকে কাজে লাগান।
কলাপাড়া পৌরসভার নতুন বাজার এলাকায় সঞ্জয় কর্মকার জানান, ‘কয়লা সংকটের পাশাপাশি লোহা ও ইস্পাতের দাম বেড়েছে। তবু ঈদের সময়টাতে কাজের চাপ বাড়ে। শানের কাজ বেশি হচ্ছে এখন। দিন-রাত কাজ করেও কুলিয়ে উঠতে পারছি না।’
গৌতম কর্মকার বলেন, এই পেশায় নতুন কেউ আসতে চায় না। অভিজ্ঞ কারিগর নেই বললেই চলে। ঘাট থেকে লেবার এনে কাজ চালাতে হচ্ছে। এবার চায়না স্টিলের জিনিসপত্র কিনছে অনেকে, তবে আমরা দেশি লোহায় মানসম্মত সরঞ্জাম দিচ্ছি।
তাঁরা আরও জানান, এখন ছুরি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা, বটি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, দা ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা, চাপাতি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায। যদিও ক্রেতাদের অভিযোগ, অন্য বছরের তুলনায় দাম কিছুটা বেশি।
কামারশিল্পীরা বলছেন, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা থাকলে এই প্রাচীন শিল্প টিকিয়ে রাখা সম্ভব। কারণ অভিজ্ঞ কারিগরের অভাব এবং কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি—দুটি সমস্যা একসঙ্গেই মোকাবিলা করতে হচ্ছে তাঁদের।
চোখেমুখে ক্লান্তি থাকলেও ঈদ সামনে রেখে ব্যস্ততার মাঝে খুশি কামাররা। কারণ এই সময়টায় তাঁদের কামারশালাতেই তৈরি হয় কোরবানির জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামগুলো। ঈদের প্রস্তুতির অদৃশ্য নায়ক যেন তাঁরাই—যাঁদের হাতের ঘাম মিশে থাকে প্রতিটি ধারালো অস্ত্রে।