উপকূলীয় জেলেদের আশ্রয়স্থল খাপড়াভাঙ্গা নদী দিনে দিনে সংকুচিত হচ্ছে

- আপডেট সময় : ০৬:৫৯:৩৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৮ মে ২০২৫ ৪৭ বার পড়া হয়েছে
পটুয়াখালীর মহিপুরের ঐতিহ্যবাহী খাপড়াভাঙ্গা নদী দখল ও দূষণের করালগ্রাসে অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। একসময় এই নদী ছিল উপকূলীয় জেলেদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল। দুর্যোগকালীন সময়ে হাজারো মাছ ধরার ট্রলার এই নদীতে এসে নিরাপদ আশ্রয় নিত। তবে বর্তমানে নদীটির চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। দুই তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা, স্থানীয়দের অবহেলা, অপরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও প্রশাসনিক তদারকির অভাবে নদীটি যেন পরিণত হয়েছে বর্জ্যের ভাগাড়ে।
খাপড়াভাঙ্গা নদী মহিপুর ও আলীপুর মৎস্য বন্দরের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত হয়ে বহুদিন ধরে এই অঞ্চলের মৎস্যজীবীদের জীবন-জীবিকার সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে আছে। নদীর প্রশস্ততা ও গভীরতা একসময় নৌযান চলাচলের জন্য উপযুক্ত থাকলেও, এখন নদীর দুই তীরে প্রতিনিয়ত ফেলা হচ্ছে পলিথিন, প্লাস্টিক, ছেঁড়া জাল, পচা মাছ এবং দোকানপাটের নানা ধরনের বর্জ্য। এছাড়া আন্ধারমানিক নদীর মুখে পলি জমে চর তৈরি হয়েছে। এর ফলে নদীর প্রাকৃতিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আরেকদিকে নদীর দুই পাড়ে প্রভাবশালী কিছু ব্যক্তি ও ব্যবসায়ী গড়ে তুলেছে অবৈধ স্থাপনা। এতে নদী সংকুচিত হয়ে শুধু মৎস্যজীবীদের চলাচলেই বাধা সৃষ্টি হচ্ছে না, বরং জলজ প্রাণীর প্রাকৃতিক আবাসস্থল ও জলজ পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
স্থানীয় জেলে আব্দুস সালাম বলেন, ‘আগে আমরা অনায়াসে ২টি বড় মাছের ট্রলার পাশাপাশি একসঙ্গে যেতে পারতাম। এখন একটার পাশ দিয়েই আরেকটা যেতে সমস্যা হয়। নদীটি এখন অনেকটা সরু ও ভরাট হয়ে গেছে।’
স্থানীয় বাসিন্দা শাহ আলম মুন্সি বলেন, ‘খাপড়াভাঙ্গা নদী আমাদের জীবনের অংশ। ছোটবেলা থেকেই দেখেছি এই নদীতে কত ট্রলার, নৌকা নিরাপদ আশ্রয় নিত। এখন নদীটি অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। চারপাশে শুধু ময়লা আর দখলদারদের দাপট। দেখার যেন কেউ নেই। প্রশাসনের নজরদারি না বাড়ালে এই নদী হয়তো আর বেশিদিন টিকবে না।’
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, খাপড়াভাঙ্গা নদীকে রক্ষা করতে হলে একটি সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। দখলকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ও কার্যকর আইনগত ব্যবস্থা, খনন কার্যক্রম, পরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং স্থানীয়দের মধ্যে পরিবেশ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে গুরুত্ব দিতে হবে। অন্যথায় ঐতিহ্যবাহী এই নদীটি বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা খুব বেশি। যার প্রভাব কেবল পরিবেশ বা নদীর ওপরই নয়, বরং পটুয়াখালীর উপকূলীয় অঞ্চলের পুরো মৎস্য খাতেই পড়বে। এর ফলে ঝুঁকিতে পড়বে হাজার হাজার জেলে পরিবার ও দেশের সামুদ্রিক মৎস্য সরবরাহ ব্যবস্থা। তার সঙ্গে হারিয়ে যাবে হাজারো জেলের স্বপ্ন, হুমকির মুখে পড়বে সমগ্র উপকূলীয় অঞ্চলের মৎস্য অর্থনীতি।
এ বিষয়ে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আমরা কুয়াকাটাবাসীর সভাপতি হাফিজুর রহমান আকাশ বলেন, ‘খাপড়াভাঙ্গা নদী শুধু মৎস্যজীবীদের জন্য নয়, দেশের সামুদ্রিক মৎস্য খাতের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। এখনই যদি আমরা সচেতন না হই, তাহলে এটি একদিন সম্পূর্ণ হারিয়ে যাবে।’
পরিবেশবাদী সংগঠন ধরিত্রী রক্ষায় আমরা-ধরা’র সমন্বয়ক মেজবাহউদ্দিন মাননু বলেন, ‘নদীটি দখল ও দূষণে যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। দূষণ রোধে আইনের কঠোর প্রয়োগ ও সীমানা নির্ধারণপূর্বক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এখনই জরুরি। নইলে নদী রক্ষার কার্যক্রম ব্যাহত হবে।’
এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কি না বা নেওয়া হবে কি না— জানতে চাইলে দায়সারা বক্তব্য দেন কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘নদীটির নাব্যতা রক্ষায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানানো হবে।’